detail blogs

a

রক্তের Rh ফ্যাক্টর কী

   রক্তের Rh ফ্যাক্টর কী?? 

১৯৪০ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার এবং উইনার ( Karl Landsteiner and Wiener) রেসাস বানরের ( Macaco mulatta)  রক্ত খরগোশের শরীরে প্রবেশ করিয়ে খরগোশের রক্তরসে এক ধরনের এন্টিবডি উৎপাদনে সক্ষম হন। এ ফলাফল থেকে বিজ্ঞানী দুজন ধারণা করেন যে,  মানুষের লোহিত কণিকার ঝিল্লিতে রেসাস বানরের লোহিত কণিকার ঝিল্লির মতো এক প্রকার এন্টিজেন রয়েছে। রেসাস বানরের নাম অনুসারে ওই এন্টিজেনকে রেসাস ফ্যাক্টর ( Rhesus factor)  বা সংক্ষেপে Rh factor বলে। 

লোহিত রক্তকণিকার প্লাজমা মেমব্রেনে Rh ফ্যাক্টরের উপস্থিতি - অনুপস্থিতির ভিত্তিতে রক্তের শ্রেণিবিন্যাসকে Rh ব্লাড গ্রুপ বলে। Rh ফ্যাক্টরবিশিষ্ট রক্তকে Rh+ ( Rh পজিটিভ)   এবং Rh ফ্যাক্টরবিহীন রক্তকে  Rh- ( Rh নেগেটিভ)  রক্ত বলে। 

বিজ্ঞানী Fisher মত প্রকাশ করেন যে,  Rh  ফ্যাক্টর মোট ৬টি সাধারণ এন্টিজেনের সমষ্টিবিশেষ। এদের ৩ জোড়ায় ভাগ করা যায়,  যেমন - C,c; D,d ; E,e।  এদের মধ্যে C,D, E হচ্ছে মেন্ডেলীয় প্রকট এবং c, d, e হচ্ছে মেন্ডেলীয় প্রচ্ছন্ন। মানুষের লোহিত কণিকায় একসঙ্গে ৩টি এন্টিজেন থাকে কিন্তু প্রতি জোড়ার দুটি উপাদান কখনও একসাথে থাকে না, যেমন - CDE, CDe,  cDE এমন সন্নিবেশ সম্ভব,  কিন্তু CDd সম্ভব নয়।  মেন্ডেলীয় প্রকট এন্টিজেন ( C, D, E)    যে রক্তে থাকে তাকে Rh+ রক্ত বলে। যে রক্তে মেন্ডেলীয় প্রচ্ছন্ন এন্টিজেন ( c,d,e) থাকে তাকে Rh- রক্ত বলে। 

    Rh ফ্যাক্টরের কারণে সৃষ্ট সমস্যাঃ 

১। রক্ত সঞ্চালনে জটিলতা ( Complexity in Blood Transfusion) : Rh- রক্তবিশিষ্ট ব্যক্তির রক্তে Rh+  বিশিষ্ট রক্ত দিলে প্রথমবার গ্রহীতার দেহে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না, কিন্তু গ্রহীতার রক্তরসে ক্রমশ Rh+ এন্টিজেনের বিপরীত এন্টিবডি উৎপন্ন হবে।  এই এন্টিবডিকে এন্টি Rh ফ্যাক্টর বলে। গ্রহীতা  দ্বিতীয়বার দাতার Rh+ রক্ত গ্রহণ করে তাহলে গ্রহীতার রক্তরসে এন্টি Rh  ফ্যাক্টরের প্রভাবে দাতার লোহিত রক্তকণিকা জমাট বেঁধে পিন্ডে পরিণত হবে।  তবে একবার সঞ্চারণের পর যদি গ্রহীতা আর ওই রক্ত গ্রহণ না করে তাহলে ধীরে ধীরে তার রক্তে উৎপন্ন সমস্ত এন্টি Rh ফ্যাক্টর নষ্ট হয়ে যায় এবং গ্রহীতা স্বাভাবিক রক্ত ফিরে পায়। 

২। গর্ভধারণজনিত জটিলতা ( Complexity in Pregnancy): সন্তানসম্ভবা মহিলাদের ক্ষেত্রে Rh ফ্যাক্টর খুব গুরুত্বপূর্ণ।  একজন Rh- ( Rh নেগেটিভ)  মহিলার সঙ্গে Rh+ ( Rh পজিটিভ)  পুরুষের বিয়ে হলে তাদের প্রথম সন্তান হবে Rh+, কারণ Rh+  একটি প্রকট বিশিষ্ট।  ভ্রূণ অবস্থায় সন্তানের Rh+ ফ্যাক্টরযুক্ত লোহিত কণিকা অমরার মাধ্যমে মায়ের রক্তে এসে পৌছাবে, ফলে মায়ের রক্তে​ Rh- হওয়ায় তার রক্তরসে এন্টি Rh ফ্যাক্টর ( এন্টিবডি)  উৎপন্ন হবে।  এন্টি ঢ় ফ্যাক্টর মায়ের রক্ত থেকে অমরার মাধ্যমে ভ্রূণের রক্তে প্রবেশ করলে ভ্রূণের লোহিত কণিকা কে ধবংস করে, ভ্রূণ ও বিনষ্ট হয় এবং গর্ভপাত ঘটে। এ অবস্থায় শিশু জীবিত থাকলেও তার দেহে প্রচন্ড রক্তাল্পতা এবং জন্মের পর জন্ডিস রোগ দেখা দেয়।  এ অবস্থাকে এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস ( erythroblastosis foetalis) বলে। 

যেহেতু Rh বিরোধী এন্টিবডি মাতৃদেহে খুব ধীরে ধীরে উৎপন্ন হয় তাই প্রথম সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না এবং সুস্থই জন্মায়।  কিন্তু পরবর্তী গর্ভাধান থেকে বিপত্তি শুরু হয় এবং ভ্রূণ এ রোগে ভুগে মারা যায়। তাই বিয়ের আগে হবু বর- কনের রক্ত পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত এবং একই Rh ফ্যাক্টরভুক্ত ( হয় Rh+ নয়তো Rh-) দম্পতি হওয়া উচিত।  তবে সুখের কথা এই যে, পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশে Rh- বৈশিষ্ট দুর্লভ।  কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ককেশিয়ানদের ১৫%  Rh-  বৈশিষ্ট্য বহন করে।  তবে যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় তারা হচ্ছে পাইরেনীজ-এর বংশ (২৫-৩৫%),  আফ্রিকার বার্বার এবং সাইনাই- উপদ্বীপের বেদুইন ( ১৮-৩০%) 

 

সূত্রঃ জীববিজ্ঞান বই ( একাদশ - দ্বাদশ শ্রেণি)